মিয়ানমার থেকে বিতারিত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান নেই । রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ থেকে শুধু বিতারিতই হয় নাই তারা সব কিছু হারিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাদের হাত থেকে কেউ রক্ষা পাই নাই এমনকি শিশুও।
কক্সবাজারে বাঁশের তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরে একটি ভাঁজ করা চিঠি হাতে সেইত বানু নামের এক রোহিঙ্গা নারী দাঁড়ানো। এতে তার স্বামী তাকে লিখেছেন- যদি কোনো ভালো পাত্র খুঁজে পাও, তবে মেয়ে উনা জামিনের বিয়ের ব্যবস্থা করবা। আর শুধু শুধু চিন্তা করবা না, কারাগারে আমার তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।কয়েকশ মাইল দূরে রাখাইন রাজ্যের একটি কারাগার থেকে চিঠিটি তাকে পাঠানো হয়েছে। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানে তার স্বামীও আটক হন। এর পর থেকে এই প্রথম স্বামীর কাছ থেকে কোনো খবর পেলেন তিনি।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই অভিযান থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যেই সেইত বানু ও তার ৯ সন্তানও রয়েছে।বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ওই সহিংসতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ ও আটক করেছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। যদিও মিয়ানমার সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
মিয়ানমারের কারাগার থেকে পাঠানো এক চিঠিতে প্রিয়জনকে লেখা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে আমি কারাগারে। কিন্তু আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবে না।বাংলাদেশের আশ্রয়শিবির থেকে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে লেখা- আমরা সবসময় তোমাকে অনুভব করি। আমি জানি, তুমিও আমাদের মিস করো।
গত ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীকে পাঠানো এক চিঠিতে এক রোহিঙ্গা লিখেছেন- দয়া করে পরিবারের সবার একটি ছবি আমাকে পাঠাও। তোমাদের সবাইকে দেখতে পেলে আমার ভালো লাগবে। আর ছেলেমেয়েদের খোঁজখবর আমাকে জানাও।গত বছরের আগস্টের এক সকালে সেইত বানুর স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমার পুলিশ। তবে কেন তাকে আটক করা হয়েছে, সেই কারণ ব্যাখ্যা করেনি।
সেইত বানু বলেন, সেদিন ভোরে আমাদের গ্রাম থেকে অর্ধশত লোককে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা ৩০টি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার কয়েক দিন আগে এ আটক অভিযান চলে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আটক অভিযান, জাতিগত নির্মূল ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জানতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি এ চিঠির বিষয়ে কোনো প্রশ্নেরও জবাব দেয়নি দেশটির সরকার।মিয়ানমার বলেছে, আগস্টের শেষ দিকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির(আরসা) হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তারা ৩৮৪ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে।
সেইত বানুও জানেন না তার স্বামীকে কোথায় রাখা হয়েছে। কিন্তু নির্মূল অভিযান শুরু হলে স্বামীকে ছাড়াই তিনি পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা গুলি করছিল এবং মানুষকে হত্যা করছিল, কাজেই আমি পালিয়ে চলে এসেছি।তিনি যে আশ্রয়শিবিরের কাছে থাকেন, সেখানে রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবীরা বলেছিলেন, যারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তারা যেনো চিঠি লেখেন। এটা গত ডিসেম্বরের কথা।
আত্মীয় স্বজনদের কাছে তিনি শুনেছিলেন, অধিকাংশ আটককে সিত্তে কারাগারে রাখা হয়েছে। কাজেই রেডক্রস স্বেচ্ছাসেবীদের তিনি নিজের স্বামীর নাম ও অন্যান্য তথ্য দেন। পরে রেডক্রসের সদস্যরা মিয়ানমারে তার স্বামীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন।রেডক্রসের মাঠকর্মী ইউজানা গত ফেব্রুয়ারিতে যখন কারাগারে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান, তখন আটকরা চোখেমুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকে হাজারটা প্রশ্ন করেছেন।
বছর ত্রিশের ইউজানা বলেন, তারা ভেবেছিল আমি তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। আমাকে একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগল- আমার পরিবার কেমন আছে? আপনি কি জানেন, আমার স্ত্রী কোথায় আছে?রোহিঙ্গাদের ভাষার একটি লিখিত রূপ আছে ও সেটিকে কম্পিউটারে টাইপ করতে একটি ফন্ট তৈরির চেষ্টা চলছে। তা সত্ত্বেও আশ্রয়শিবিরে ভাষাটির খুব একটা ব্যবহার হতে দেখা যায়নি।
কারাগারের ভেতরে ও বাইরে মিয়ানমার সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখায় চিঠির কথাগুলো পারিবারিক খবরের মধ্যেই সীমিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা।তারা গত বছরের সহিংসতা কিংবা তাদের গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না বলে জানিয়েছে রেডক্রস।
দেশটির কারা মুখপাত্র বলেন, কারাগারে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চিঠিতে লেখা তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, আমরা সবসময়ই তা যাচাই করে দেখি।উখিয়ার জাদিমুরা আশ্রয়শিবিরে সম্প্রতি এক বিকালে বাংলাদেশে রেডক্রস সোসাইটির এক স্বেচ্ছাসেবী ১৬ জনের একটি নামের তালিকা উচ্চৈঃস্বরে পড়ছিলেন। তালিকার মানুষগুলো বুথিডাংয়ের কারাগারে জীবিত আছেন বলে খোঁজ পাওয়া গেছে।